Header Ads Widget

ওযুর নিয়মাবলী


ওযু কি? 


بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ


 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম


ইসলামের বিধান অনুসারে, অযু হল দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ধৌত করার মাধ্যমে  পবিত্রতা অর্জনের একটি পন্থা। মুসলমানেরা নামাজের পূর্বে অযু করে নেয়। পবিত্র কোরানে আছে -“নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তওবাকারীকে ভালবাসেন এবং  যাহারা পবিত্র থাকে তহাদিগকেও ভালবাসেন।
  (সূরা বাকারা,আয়াত:২২২)। কোরান শরীফ পড়তে ও স্পর্শ করতেও অযু করতে হয়। পবিত্র কোরানে আছে -“যাহারা পূত-পবিত্র তাহারা ব্যতীত অন্য কেহ তাহা স্পর্শ করো না।
 “[১](সূরা ওয়াক্কিয়াহ্‌, আয়াত:৭৯)। দেহ ও পরিধেয় কাপড়ের পবিত্রতা আর্জনকে বলে তাহারাত্‌।  অযু বা গোসলের মাধ্যমে তাহারাত্‌ আর্জন করা যায়। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন - পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ধর্মের অর্ধেক। (সহীহ মোসলিম)।







ওযুর ফরজ কয়টি

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ওযুর ফরয হচ্ছে ৬টি –

 ১. কুলি করা, নাকে পানি দেয়া ও নাক ঝাড়াসহ সমস্ত মুখমন্ডল ভালোভাবে ধৌত করা।

 ২. কনুইসহ দুইহাত ধৌত করা।

 ৩. ভেজা হাতে কানসহ মাথা মাসাহ করা।

 ৪. টাখনুসহ দুই পা ধৌত করা।

 ৫। ওযুর অঙ্গগুলোর মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।

  ৬। পরম্পরা রক্ষা করা (অর্থাৎ অঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের বিরতি না দেয়া)।

 ফতওয়া, আল্লামাহ শায়খ আব্দুল আজীজ বিন বাজ (রহঃ)। 

 যেমন আল্লাহ বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাযের জন্য প্রস্তুত হও, তখন তোমাদের মুখমন্ডল ও দুইহাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ করা ও দুইপা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর”। সুরা আল-মায়িদাঃ ৬। 

 এই আয়াতের বর্ণিত কাজগুলো ছাড়া বাকি সবগুলো কাজ সুন্নত।




ওযুর সুন্নত সমূহ 

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ওযুর সুন্নতসমূহ অনেক।

  শাইখ সালেহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ্‌) বলেন: ওযুর সুন্নতসমূহ হচ্ছে-

  ১। মেসওয়াক করা। এর স্থান হচ্ছে- গড়গড়ার সময়। যাতে করে মেসওয়াক ও গড়গড়ার মাধ্যমে মুখ পরিস্কার করা যায়; যার ফলে ইবাদত, তেলাওয়াত ও আল্লাহ্‌র সাথে গোপন আলাপের জন্য নিজেকে তৈরী করে নেয়া যায়।

  ২। ওযুর শুরুতে চেহারা ধৌত করার আগে হাতের কব্জিদ্বয় তিনবার ধৌত করা।  এ বিষয়টি হাদিসে উদ্ধৃত হওয়ার কারণে এবং যেহেতু হস্তদ্বয় হচ্ছে- ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পানি ব্যবহার করার মাধ্যম।তাই এ দুটোকে ধৌত করার মাঝে সমস্ত ওযুর জন্য সতর্কতা অবলম্বন পাওয়া যায়।

  ৩। চেহারা ধৌত করার আগে গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়া; অনেক হাদিসে এ দুটো দিয়ে শুরু করার কথা উদ্ধৃত হওয়ার কারণে।  রোযাদার না হলে প্রকৃষ্টভাবে এ দুটো আদায় করবে। গড়গড়া কুলি প্রকৃষ্টভাবে আদায় করার অর্থ হল: গোটা মুখের ভেতরে পানি ঘুরানো।  প্রকৃষ্টভাবে নাকে পানি দেয়ার অর্থ হচ্ছে: পানি টেনে একেবারে নাকের উপরে তুলে নেয়া।

  ৪। পানি দিয়ে ঘন দাঁড়ি খিলাল করা; যাতে করে ভেতরে পানি ঢুকে। দুই হাত ও দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।

  ৫। ডান হাত ও ডান পা দিয়ে শুরু করা।

  ৬। মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয় ও পা-যুগল ধৌত করার ক্ষেত্রে একবারের অধিক তিনবার ধৌত করা।[আল-মুলাখ্‌খাস আল-ফিকহি (১/৪৪-৪৫) থেকে সমাপ্ত]




ওজুর মাকরূহসমূহ

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
 ওজুর মাকরূহসমূহ

  ক. প্রয়োজনের বেশি পানি ব্যয় করা।

  খ. প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি ব্যয় করা।

  গ. মুখমণ্ডলে এমনভাবে পানি নিক্ষেপ করা যে, পানির ছিঁটা অন্যত্র পড়ে।

  ঘ. ওজুর সময় অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা।

  ঙ. ওজুর সময় বিনা ওজরে অন্যের সাহায্য নেয়া।

  চ. নতুন পানি নিয়ে তিনবার মোথা মাসেহ করা।

  পরিশেষে... আল্লাহ তাআলা বান্দার নামাজ আদায়ের জন্য ওজুকে করেছেন ফরজ। বিনা ওজুতে ফরজ ইবাদত করা পাপের কাজ।  আল্লাহ উম্মাতে মুসলিমাকে সব ধরনের অনাচার,   পাপাচার থেকে হিফাজত করে মনঞ্জিলে পৌঁছার তাওফিক দান করুন। আমিন।





ওযুর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

 ওযুর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ

  ♥ ওযুর জায়গা নখ পরিমান শুকনো থাকলে ওযু হবেনা।
 সহীহ তিরমিযী ৪১।

 এইজন্য আস্তে ধীরে মনোযোগের সহিত সুন্দর করে ওযু করতে হবে। তাড়াহুড়া করে অন্য চিন্তা মাথায় নিয়ে ওযু করা অনুচিত, কারণ এতে যদি ওযু না হয় তাহলে নামাযই কবুল হবেনা!  তাই আমাদের উচিত ওযু করার সময় খেয়াল রাখা।

 ১. ওযুর অংগগুলো একবার, দুই বার বা তিনবার ধৌত করতে হবে।  একবার করা ফরয, সর্বোচ্চ তিনবার করা উত্তম। তবে মাথা মাসাহ বা পায়ে মোজা থাকলে পা মাসাহ একবারই করতে হবে। তিনবারের বেশি করা বাড়াবাড়ি – হাদীসে এই কাজের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত ৩৯৫- ৩৯৭।

 ২. পানি অপচয় করা যাবেনা। টেপ ছেড়ে ওযু করা পানি অপচয়ের মধ্যে পড়বে।  উচিত হচ্ছে মগে বা কোনো পাত্রে পানি নিয়ে ওযু করা। আর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ওযু করতেন এক মুদ বা ৬২৫ গ্রাম পানি দিয়ে (প্রায় পৌনে এক লিটার). বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত ৪৩৯।

 ৩. ওযু শেষে ভেজা অংগ গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলা জায়েজ রয়েছে। ইবনে মাজাহ ৪৬৫, ৪৬৮। 

 ৪. এক ওযু দিয়ে পরের ওয়াক্তের নামায পড়া জায়েজ – তবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সবসময় নতুন করে ওযু করে নিতেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি একবার এক ওযু দিয়ে দুই ওয়াক্তের নামায পড়েছিলেন।

 ৫. শরীরে কোনো জখম বা ব্যান্ডেজ থাকলে ঐ অংশটুকুর উপরে ভেজা হাতে একবার মাসাহ করলেই হবে, ধৌত করতে হবেনা।  সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ১/১৬১।

 ৬. ওযুর শুরুতে প্রয়োজনীয় কথা বলতে ও সালাম দিতে বা নিতে হাদীসে কোনো নিষেধ নেই।

 ৭. প্রত্যেক অংগ ধোঁয়ার সময় আলাদা আলাদ দুয়া – এইগুলো বেদাত। এইগুলো না রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পড়েছেন, না সাহাবার করেছেন না চার ইমাম থেকে কোনো বক্তব্য আছে। যাদুল মায়াদ ১/৮৮।

 ৮. শরীরের যেকোনো স্থান থেকে কম হোক আর বেশি হোক রক্ত বের হলে ওযু নষ্ট হবেনা। বুখারী, ২৯ পৃষ্ঠা। 

 ৯. কাপড় চেঞ্জ করলে বা হাটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে ওযু ভেঙ্গে যায়না। 

 ১০. বমি হলে, নামাযের ভেতরে বা বাইরে উচ্চস্বরে হাসলে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিলে বা বহন করলে ওযু ভেঙ্গে যায়না। 





ওযুর নিয়ত বাংলা সহঃ

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

 উচ্চারনঃ নাওয়াইতু আন আতাওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাসি ওয়া ইস্তিবাহাতা লিছছালাতি ওয়া তাকাররুবান ইলাল্লাহি তা'য়ালা।

  অর্থ ঃ আমি ওযুর নিয়ত করছি যে নাপাকি দূর করার জন্য বিশুদ্ধরূপে নামাজ আদায়ের উউদ্দেশ্য  এবং  আল্লাহ তা'য়ালা।

  এভাবে নিয়ত পাঠ করার পর সর্বপ্রথম ডান হাত ও পরে বাম হাতের কবজি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করা। 
  তারপর গড়গড়ার সাথে ৩ বার কুলি করা। এরপর ডান হাত দিয়ে নাকে পানি দেয়ে বাম হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙুলি নাসিকা  ছিদ্রে প্রবেশ করিয়ে  ভিতর ভাগ ৩ বার ধৌতে হবে।  সমস্ত মুখমণ্ডল ললাতের উপরিভাগের চুল উঠার স্তান হতে থুতনীর নিচ পর্য ন্ত এবং  ১ কানের লতি হতে অন্য কানের লতি ভালোভাবে ৩ বার ধৌত করা।
  মুখমন্ডলের কোন অংশ যেনো শুকনো না থাকে। যাদের দাড়ি ঘন তা খিলাল করে ভিজাতে হবে।এরপর উভয় হাতের ৩ টি আঙুলি একএে করে মাথার ১ চতুর্থাংশ মাসেহ করবে।  সাথে সাথে দু হাতের কনিষ্ঠ আঙুলি কানে দুকিয়ে বৃদ্ধাঙুল দিয়ে কানের পৃষ্ঠ দেশ মাসেহ করবে আর উভয় হাতের পিঠ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করা।  এরপর ডান পা ৩ বার টাখনু ছোট গিরাসহ ধৌত করবে এরপর বাম পাও ৩ বার ধৌত করবে।




ওজু ভঙ্গের কারণসমূহঃ

بِسْمِ اللہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

 ওজু ভঙ্গের কারণসমূহ

  যে সব কারণে ওজু ভঙ্গ হয় বা নষ্ট হয় তা হলো-

   ক. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া।

  খ. দেহের কোনো অংশ থেকে রক্ত, পুঁজ বের হয়ে যদি পবিত্র হওয়ার বিধান প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ গড়িয়ে পড়ে।

  গ. মুখ ভর্তি বমি অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বমি হলে।

  ঘ. নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে।

  ঙ. ঘুমানো- চিৎ হয়ে; কাত হয়ে; হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে ফেললে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে।

  চ. অজ্ঞান হওয়ার পর; এমন অজ্ঞান যাতে বোধ শক্তি লোপ পায়।

  ছ. অপ্রকৃতিস্থতা। যা ঘুম বা নিদ্রার চেয়েও প্রবল।

  জ. রুকু-সাজদা বিশিষ্ট নামাজে অট্ট হাসি; তবে জানাজা নামাজে, তিলাওয়াতে সিজদায় এবং নামাজের বাইরে হাসলে অযু নষ্ট হবে না।

  ঝ. পিছনের রাস্তা দিয়ে অর্থাৎ পায়খানার রাস্তা দিয়ে কীট বের হলে পবিত্রতা অর্জন তথা অযু করতে হবে।

  ঞ. ফোঁড়া বা ফোস্কার চামড়া তুলে ফেলার কারণে যদি পানি বা পুঁজ বের হয়ে  ফোঁড়া বা ফোস্কার মুখ অতিক্রম করে তাহলে পবিত্র নষ্ট হবে।

  ট. পুরুষ ও মহিলার গুপ্তাঙ্গ কোনো অন্তরায় ব্যতিত একত্রিত হলে; বীর্যপাত হোক আর না হোক ওজু নষ্ট হবে।
















Post a Comment

0 Comments